কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের কাজলদহ গ্রাম। এই গ্রামের দিনমজুর আমজাদ হোসেন ও নাজমা বেগমের দুই মেয়ের মধ্যে আসমানী ছোট। দুই বোন আর মাকে নিয়ে দিনমজুর বাবার সংসার চলছিল ভালোই। সামান্য জমানো টাকায় বড় মেয়েকে পাশ্ববর্তী রাজারহাট গ্রামে বাল্য বিয়ে দেয়া হয়। পড়াশোনার শখ থাকায় আসমানীকে ভর্তি করানো হয় স্থানীয় মাদরাসায়। এভাবেই চলছিল তাদের সংসার।
আসমানী যখন সপ্তম শ্রেণিতে ওঠে তখন হঠাৎ করে বাবা আমজাদ হোসেন মারা যান। তার মৃতুতে মা নাজমা বেগমের মাথায় আকাশ ভেঙে পরে। কিশোরী মেয়েকে নিয়ে তিনি চরম সংকটের মধ্যে পরে যান। এই অবস্থায় মায়ের বাড়িতে চলে যান তিনি। কিন্তু দাদির বাড়িতেই পড়াশোনা চলছিল আসমানীর।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে আসমানীর কাকা আশরাফুল ইসলাম তার বাড়িতে নাজমা বেগমকে তার মেয়েসহ ডাকেন। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন একই ইউনিয়নের আলোরচর গ্রামের নবরুদ্দির ছেলের সাথে আসমানীর বিয়ের আয়োজন করা হচ্ছে, নাম আলামিন। আসমানীকে কিছু বুঝতে না দিয়ে মৌলভী দিয়ে বিয়ে পড়ানো হয়।
কিন্তু আসমানী বিয়ে অস্বীকার করে। শশুর বাড়ির লোকজন চেষ্টা করেও তাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে পারে নি। ফলে পরিবারের সবাই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।
এনিয়ে চাচা আশরাফুল, মা, বোন ও দাদী তাকে বিভিন্নভাবে মারধর করে। একদিন ছেলেটি জোড় করে ঘরে ঢুকলে তার সাথে আসমানীর হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এসময় ছেলেটি আসমানীকে ওড়না দিয়ে বেঁধে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। তার চাচা তাকে নদীতে ফেলে দেয়ার হুমকি দেয়। এতেও কথা না শোনায় কবিরাজ এনে চিকন কঞ্চি দিয়ে আসমানীকে পেটানো হয়। এ ঘটনার পর বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় মেয়েটি।
এ বিষয়ে ঘোগাদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ আলম জানান, আসমানী নামে নির্যাতিত মেয়েটি গভীর রাতে আমার বাড়িতে এসে জানায় সে আর বাড়ি ফিরবে না। তাকে আশ্রয় না দিলে সে আত্মহত্যা করবে। আমি মেয়েটিকে আশ্রয় দিয়ে পরদিন তার অভিভাবকদের ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে আনি। সেখানে সালিশ বৈঠকে মেয়েটি জানায় তাকে বাড়িতে ফেরানোর চেষ্টা করা হলে সে জীবন দিয়ে দেবে। মেয়েটির নিরাপত্তার কথা ভেবে নিজের বাড়িতে মেয়ে হিসেবে আশ্রয় দিয়েছেন বলে চেয়ারম্যান শাহ আলম জানান।
ইউএনবিকে আসমানী জানায়, ‘আমি পড়তে চাই, আরও জানতে চাই। আমাদের সমাজে মেয়েদের মতামতের গুরুত্ব না দিয়ে তাদেরকে জোড় করে বাল্য বিয়ে দেয়া হয়, এটা উচিত নয়।’
বেসরকারি এনজিও এইড কুমিল্লার ডিস্ট্রিক ইনচার্জ মিজানুর রহমান জানান, ‘আমরা মেয়েটির সেফটির কথা চিন্তা করে প্রশাসনের সাথে তাকে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছি। তাৎক্ষণিকভাবে বইপত্র কেনার জন্য অর্থ সহযোগিতা করেছি। ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউএনও তার দেখভালোর দায়িত্ব নিয়েছেন।’
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিলুফা ইয়াসমিন জানান, ‘মেয়েটির নিরাপত্তার কথা ভেবে তার পরিবারের কাছে মুচলেকা নিয়ে ঘোগাদহ ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলমের জিম্মায় দেয়া হয়েছে। মেয়েটির উচ্চ শিক্ষার জন্য আমরা পাশে থাকব।’